স্টাফ রিপোর্টার, দিগন্তবার্তাঃ-
ময়মনসিংহের ভালুকায় প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে একদরে বিক্রি হচ্ছে সরকার নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বই। ভালুকা বাসস্ট্যান্ড থেকে বাজার রোড পাঁচ রাস্তার মোড়সহ উপজেলার প্রায় প্রতিটি হাট বাজারের দোকানগুলোতে অবৈধভাবে পাঞ্জেরি, গ্যালাক্সি, লেকচার, অনুপম, জননী, জুপিটার, একের ভিতর সব, আদিল, দিকদর্শন, টেন টিচার পাবলিকেশন্সসহ বিভিন্ন প্রকাশনীর ছাপানো নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বই ফ্রি-স্টাইলে বিক্রি হচ্ছে। একটি সিন্ডিকেট বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে ম্যানেজ করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে ভুলে ভরা নিম্নমানের এসব বই। ৪০ বছর আগে নোট এবং গাইড বই নিষিদ্ধের আইন করা হলেও, বাজারে এখনো দেদারসে চলছে নোট গাইড বিক্রি। শিক্ষার্থীরা বলছে, পাঠ্যবইয়ে জটিল পাঠ এবং অতিরিক্ত পরীক্ষার কারণে তারা নোট-গাইডের প্রতি ঝুঁকছে। আর শিক্ষাবিদরা বলছেন, সরকারের সদইচ্ছার অভাবেই বন্ধ হয়নি গাইড বই।
আল মাহমুদ নামে এক ব্যক্তি তার ৮ম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ের জন্য গাইড বই কেনার উদ্দেশ্যে এসেছেন ভালুকা পাঁচ রাস্তামোড় এলাকায় এক বইয়ের দোকানে। হাতে নিয়ে এসেছেন স্কুল থেকে ধরিয়ে দেয়া নোট গাইডের একটি তালিকা। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন প্রকাশনি সংস্থা স্কুল কর্তৃপক্ষকে উপঢোকনের বিনিময়ে নোট গাইড কেনাতে উদ্বুদ্ধ করে। তবে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং প্রকাশকরা বলছেন জটিল পাঠ্যবই এবং অতিরিক্ত পরীক্ষার কারণেই নোট-গাইডের প্রতি ঝুঁকছে সবাই। নোট এবং গাইড বই বন্ধ করতে ব্যর্থ হলে জাতিকে চরম মূল্য দিতে হবে বলেও মনে করেন শিক্ষাবিদগন। ১৯৮০ সালে আইন করে নোট এবং গাইড বই নিষিদ্ধ করা হয়। তবে সেই আইন বাস্তবায়নে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের পক্ষথেকে প্রতিবছর শুধুমাত্র একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়া ছাড়ার সরাসরি কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাঠ্যবইয়ের বাইরেও নিষিদ্ধ গাইড বই কেনার জন্য শিক্ষার্থীদের নানাভাবে চাপ দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গাইড বইয়ের প্রয়োজন না হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কিছু অসাধু শিক্ষক, কোচিং সেন্টার, দল ধরে পড়ানো প্রাইভেট টিউটর আর ‘শিক্ষক সমিতি’ নামে এক ধরনের সংগঠনের সিন্ডিকেট নিষিদ্ধ গাইডবই কিনতে বাধ্য করছে শিক্ষার্থীদের। কেজি স্কুল থেকে শুরু করে প্রাইমারি, মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক সবখানেই এ সিন্ডিকেটের লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য চলছে।
সারাবছর দু-একটি করে সৌজন্য সংখ্যার বই দিয়ে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে সমন্বয় রাখেন বিভিন্ন প্রকাশনীর রিপ্রেজেন্টেটিভরা। বছর শেষে শিক্ষক আর সমিতিকে সমন্বয় করিয়ে উপজেলা ভিত্তিক একটি প্রকাশনীর বই চাপিয়ে দেয়া হয়।
জানা যায়, বইয়ের গুণগত মান নির্ভর করে ডোনেশনের ওপর। বিনিময়ে সমিতিকে দিতে হয় বড় অংকের অর্থ। প্রকাশনী শিক্ষক সমিতিকে আয়ত্বে নিতে না পারলে শুরু হয় প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে তাদের প্রকাশনীর বই বুকলিস্টে নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা। সমিতির বাইরের প্রতি স্কুলকে দিতে হয় একটি ন্যূনতম অর্থ বা বিভিন্ন ধরণের উপটৌকণ। এমন অভিযোগ এখন অহরহ। যার ফলে বইয়ের মূল্য চলে গেছে সাধারণ শিক্ষার্থীর হাতের নাগালের বাইরে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা খাতুন জানান, বিষয়টির ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।