স্টাফ রিপোর্টার, দিগন্তবার্তাঃ-
ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা শাজাহান সিরাজ ঢাকায় মারা গেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। তার বয়স হয়েছিলো ৭৮ বছর। ১৪ জুলাই মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটায় রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে তিনি মারা যান। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ক্যানসারে ভুগছিলেন।
শাহজাহান সিরাজ ছাত্রলীগের মাধ্যমে ষাটের দশকের শুরুতে রাজনীতি শুরু করলেও শেষ জীবনে জেনারেল জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বিএনপিতে গিয়ে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হয়েছিলেন ও দলটির ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছেন। এরপর ক্রমশ অসুস্থতার জন্য রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন এবং গত বেশ কয়েক বছর তিনি ছিলেন শয্যাশায়ী।তার সর্বশেষ রাজনৈতিক দল বিএনপি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটায় তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান। ১৯৪৩ সালের পহেলা মার্চ টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতি উপজেলার বেতডোবা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শাজাহান সিরাজ। আমিনুর রহমান ও মোস্তফা ফিরোজ সম্পাদিত প্রামাণ্য সংসদ বইয়ের তথ্য অনুযায়ী,মোট পাঁচবার সংসদ সদস্য হয়েছিলেন শাজাহান সিরাজ। এর মধ্যে চারবার জাসদ সংসদীয় দলের নেতা ছিলেন।১৯৬২ সালে করটিয়া সা’দত কলেজের ছাত্র থাকাকালে রাজনীতিতে সক্রিয় হন ও পরে দুবার এ কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ষাটের দশকে এগার দফা আন্দোলন ও ১৯৬৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের জের ধরে যে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিলো, সেসময়ের স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের শীর্ষ চার নেতার একজন ছিলেন তিনি। আব্দুল কুদ্দুস মাখন, নুরে আলম সিদ্দিকী, আসম আব্দুর রব ও শাজাহান সিরাজ তখন রাজনীতিতে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন ‘চার খলিফা’ নামে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শাজাহান সিরাজ ১৯৭১ সালের তেসরা মার্চ ঢাকায় স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স – বিএলএফ, যা মুজিব বাহিনী হিসেবে পরিচিত ছিলো তার একজন কমান্ডার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পর গঠিত রাজনৈতিক দল জাসদ-এর প্রতিষ্ঠাতা সহসাধারণ সম্পাদক ছিলেন মিস্টার সিরাজ। পরে এ দলের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন তিনি। এক পর্যায়ে জাসদ ভাগ হলে তিনিও একটি অংশের নেতৃত্ব দিয়েছেন। রাজনৈতিক পালাবদলের ধারাবাহিকতায় ১৯৯৫ সালে তিনি জাসদ ছেড়ে যোগ দেন বিএনপিতে। ১৯৯৬ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি অল্প কয়েকদিনের জন্য ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। পরে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি মন্ত্রী হন। বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ার পরেও অনেক দিন সক্রিয় ছিলেন তিনি। কিন্তু ২০১২ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে ক্রমশ রাজনীতি থেকে গুটিয়ে নেন নিজেকে। সর্বশেষ গত কয়েক বছর তার শারীরিক অবস্থা ছিলো খুবই জটিল। তার স্ত্রী রাবেয়া সিরাজ বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত ও মহিলা দলের কেন্দ্রীয় নেতা। তাদের এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান। সূত্র-বিবিসি বাংলা।