এম কামরুজ্জামান, গফরগাঁও (ময়মনসিংহ):-
একশত পাঁচ বছর বয়সী বৃদ্ধাকে বস্তায় ভরে কনকনে শীতের রাতে রাস্তায় ফেলে গেল তার স্বজনরা। পুলিশ হাসিনা বেগম নামের ওই অসহায় বৃদ্ধাকে গফরগাঁও-ভালুকা সড়কের স্থানীয় ষোলহাসিয়া তিতাস গ্যাস অফিস সংলগ্ন একটি টঙ দোকানের সামনে থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনায় থানা পুলিশ বৃদ্ধার সৎ ছেলে ও নাতি জামাইকে আটক করেছে।
জানা গেছে, গফরগাঁও পৌর সভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চর জন্মেজয় এলাকার বৃদ্ধা হাসিনা বেগমের স্বামী আব্দুল খালেক মারা যান প্রায় ৩০ বছর আগে। তার একমাত্র মেয়ে জোসনাও বেঁচে নেই । নিজের ছেলে সাহিদ ও দুই সৎ ছেলে দুলাল উদ্দিন (৬২), জালাল উদ্দিন (৫৮) ও তাদের ছেলেমেয়ে এবং মেয়ে জোসনার ছেলে মেয়েরা কেউ খবর নেয় না বৃদ্ধা হাসিনার। অথচ তারা প্রত্যেকেই স্বচ্ছল ও স্বাবলম্বি। স্বামীর রেখে যাওয়া বসত ভিটায় একটি পুরনো ঘরে থাকতেন হাসিনা। দীর্ঘ দিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি। স্বাভাবিক চলাফেরার সক্ষমতাও হারিয়েছেন আরো বহু আগেই। ঘন ঘন কাশিতে বিরক্ত হতেন তার সন্তান ও নাতি-নাতনিরা। তার কান্নার শব্দ শুনে কখনো প্রতিবেশীদের কারোর দয়া হলে দুমুঠো খাবার তার বিছানার পাশে রেখে যেতেন। তিনি একাকি শুয়ে বহু কষ্টে খাবার উঠিয়ে খেতেন। তাকে কেউ টয়লেটে যেতে সহায়তা না করায় তিনি বিছানায় মল-মূত্র ত্যাগ করতেন। এতে তার জরাজীর্ণ ঘরটিতে উৎকট গন্ধে ও মছা মাছি ভন ভন করতো। এ অবস্থায় তার সেবা শশ্রæষার পরিবর্তে তার নাড়ি ছেড়া সন্তানরা কনকনে ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশার মধ্যে মঙ্গলবার গভীর রাতে বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে গফরগাঁও-ভালুকা সড়কের ষোলহাসিয়া এলাকায় তিতাস গ্যাস অফিস সংলগ্ন একটি টঙ দোকানের সামনে বৃদ্ধা হাসিনা বেগমকে বস্তায় ভরে ফেলে রেখে যায়। বুধবার ভোরে বস্তার ভেতর থেকে মাথা বের করে কাশিযুক্ত শ্বাসকষ্টের গুংরানির শব্দ শুনতে পায় পথচারীরা। পরে পথচারীদের মাধ্যমে খবর পেয়ে গফরগাঁও থানা পুলিশ বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সকালেই পুলিশ বৃদ্ধার সৎ ছেলে দুলাল উদ্দিন (৬২) ও দুলালের মেয়ের জামাই আনোয়ার হোসেন (৪০) কে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশ জানায়, বৃদ্ধার ছেলে সাহিদ ত্রিশাল উপজেলার বালিপাড়া গ্রামে বাস করে।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, বৃদ্ধাকে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। তার দু’চোখ বেয়ে অশ্রæ গড়িয়ে পড়ছে। তিনি কি যেন বলতে চাইছেন। কিন্ত তার শক্তিহীন ক্ষীন কন্ঠে কোনো শব্দ উচ্চারণ করতে পারছেন না। বৃদ্ধার বাড়ি হাসপাতাল থেকে প্রায় এক কিলোমিটারের মধ্যে হলেও হাসপাতালে নেওয়ার পর এপর্যন্ত তার পরিবারের কোন সদস্য কিংবা কোন আত্মীয়স্বজন তাকে দেখতে হাসপাতালে আসেনি।
স্থানীয়রা জানায়, ৩০ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর বহু কষ্টে সংসারের হাল ধরেছিলেন হাসিনা বেগম। এখন বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। চলাফেরাও করতে পারেন না তিনি। সন্তান ও নাতিরা তাকে এখন বোঝা মনে করছেন।
গফরগাঁও থানার ওসি অনুকুল সরকার বলেন, এলাকাবাসীর মাধ্যমে খবর পেয়ে বৃদ্ধা হাসিনা বেগমকে রাস্তা থেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এখন বৃদ্ধাকে তার ছেলেদের কাছে কিংবা নাতিদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। বৃদ্ধার যাতে কোন অযতœ না হয় সেজন্য থানা পুলিশ তদারকি করবে।
গফরগাঁওয়ে গভীর রাতে শতবর্ষী বৃদ্ধাকে বস্তায় ভরে রাস্তায় ফেলে গেল সন্তানরা
0
Share.